সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ড ফর ইসলামিক ব্যাংকস অব বাংলাদেশ (সিএসবিআইবি/CSBIB) ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম/BIBM)-এর যৌথ উদ্যোগে গোলটেবিল আলোচনা ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সোমবার বিকাল ৩:৩০ টায় বিআিইবিএম অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট-এর মহাপরিচালক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে Reforms Towards Advancing Islamic Banking for a Sustainable Economy শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জনাব মোঃ জাকির হোসেন চৌধুরী এবং সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ। আলোচনা অনুষ্ঠানে একটি টেকসই অর্থনীতির জন্য ইসলামী ব্যাংকিংকে অগ্রসর করার ক্ষেত্রে মোট ২৫টি সংস্কার প্রস্তাবনা পেশ করে মূলপ্রবন্ধ যৌথভাবে উপস্থাপন করেন বিআইবিএম-এর ফ্যাকাল্টি, সহযোগী অধ্যাপক ও সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ডের অ্যকাডেমিক অ্যাডভাইজর ড. মোঃ মহব্বত হোসেন এবং ইসরা রিসার্চ ম্যানেজমেন্ট সেন্টার, ইনসেইফ ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়ার রিসার্চ ফেলো ও সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ডের রিসার্চ অ্যাডভাইজর জনাব মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ।
গোলটেবিল আলোচনায় এক্সপার্ট প্যানেলে বক্তব্য রাখেন ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান জনাব মুঃ ফরীদ উদ্দিন আহমাদ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসির চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির চেয়ারম্যান জনাব মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের সভাপতি মোহাম্মদ ফোরকান উদ্দিন, এফসিএ, সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড. মোঃ আনোয়ার হোসাইন মোল্লা, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির শরীআহ সুপারভাইজরি কমিটির সদস্যসচিব প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. যুবাইর মুহাম্মদ এহসানুল হক, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরিচালক জনাব মোঃ জুলকার নাইন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর জনাব মোঃ শওকতুল ইসলাম, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সিলেকশন গ্রেডের প্রফেসর ড. শাহ মোঃ আহসান হাবীব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এইচ এম মোশারফ হোসাইন, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ও আইক্যাব-এর কাউন্সিল মেম্বার জনাব মোঃ মাহামুদ হোসেন, এফসিএ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার মোহাম্মদ বেলায়েত হোসাইন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিরেক্টর (গবেষণা) ড. মোঃ গোলজারে নবী, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিআইবিএম এর ডিরেক্টর (অ্যাডমিন ও অ্যাকাউন্টস) জনাব এ কে এম রেজাউল কারীম এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউস অব ইসলামিক থ্যট মহাপরিচালক ড. মুহাম্মদ আব্দুল আযীয। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বোর্ডের সেক্রেটারি জেনারেল জনাব মোঃ আবদুল্লাহ শরীফ। স্বাগত বক্তব্যে তিনি গোলটেবিল আলোচনার বিষয়বস্তুকে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ড, বিআইবিএম, সদস্য ব্যাংক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও শরীআহ স্কলারবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনায় বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টজনদের ত্যাগ-কুরবানী ও ইখলাসের কথা বর্ণনা করা হয়। এবং ইসলামী ব্যাংকিং শিল্পের প্রসার ও মজবুত ভিত্তির জন্য ব্যাংকসমূহের পরিচালক, নির্বাহী, কর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের নৈতিকতা ও অঙ্গীকারকে মূলশক্তি হিসেবে অভিহিত করা হয়।
সেইসাথে গত রেজিমে ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ের জন্য বিগত সরকারসহ প্রত্যেক স্টেক হোল্ডারের দায় আছে বলে বক্তারা উল্লেখ করেন। সুতরাং এ বিপর্যয় থেকে ইসলামী ব্যাংকগুলোকে ঘুরে দাাঁড়ানোর জন্য বক্তাগণ এ শিল্পের কর্মীদেরকে ব্যক্তিগত, ধর্মীয় ও নৈতিক মানে উত্তীর্ণ হওয়ার ওপর বেশ গুরুত্বারোপ করেন এবং জ্ঞানের জগতে নিজেদের শাণিত করার আহ্বান জানান। স্টেক হোল্ডারদেরকে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি এ সেক্টরের উপযোগী জনবল তৈরিতে দেশের শীর্ষ বিদ্যালয়সমূহকে ইসলামিক ব্যাংকিং ও ফাইন্যান্স বিষয়ে পৃথক ফ্যাকাল্টি/ বিভাগ/ ইনস্টিটিউট চালুর জোর দাবী পেশ করা হয় এবং ব্যাংক কর্মীদেরকে ইসলামী ফাইন্যান্সসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোর্স ও প্রফেশনাল ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ দিতে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে জানানো হয়- ইসলামিক ব্যাংকিং গাইডলাইনের নতুন সংস্করণ সার্কুলারের অপেক্ষায় রয়েছে এবং ইসলামী ব্যাংকিং আইনের চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত হয়েছে, শীঘ্রই বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে এটি জনমত গ্রহণের জন্য অনলাইনে ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এ ছাড়া অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে জানানো হয় যে, ইসলামী ব্যাংকিং অতীতকালে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে দেশের অর্থনীতি ও সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুপারভিশন বৃদ্ধি ও ঝুঁকি নিরসনে পূর্বপদক্ষেপ গ্রহণসহ বিভিন্ন নীতি নির্ধারণ করা হয়।
ইসলামী ব্যাংকগুলোর সাম্প্রতিককালে কিছু বিপর্যয় ঘটলেও এদেশের মানুষের আস্থার প্রতীক হিসেবে ইসলামী ব্যাংকগুলো আবারো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে স্টেক হোল্ডারদের ইতিবাচক ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ড ও বিআইবিএম-এর উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয় এবং ইসলামিক ফাইন্যান্সের প্রচার-প্রসার ও দক্ষ জনবল গঠনে বিভিন্ন সময়ে সেন্ট্রাল শরীয়াহ্ বোর্ডের ভূমিকার জন্য ভূয়সী প্রশংসা করা হয়।